অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য

আকিল আহম্মেদ, 

দুবাইতে ৫৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশির দণ্ড মওকুফের ঘোষণাটি দেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, বার্লিন, প্যারিস, কলকাতা, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের শহর দুবাইতেও প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কর্মীরা এই আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ করেছেন।

দুবাইতে বিক্ষোভ: আইন লঙ্ঘন এবং তার পরিণতি

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। দুবাইতে এই নিয়ম অমান্য করে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করলে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আইন ভঙ্গের অভিযোগে ৫৭ জনকে আটক করে এবং বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড প্রদান করে। এর মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন প্রবাসী শ্রমিক, যারা জীবিকার তাগিদে দেশে ফিরে আসার সামর্থ্যও হারিয়েছিলেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ:

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে, দুবাইতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের পরিবারের মধ্যে আশার আলো দেখা দেয়। দেশের ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে সকল সচেতন নাগরিক এই বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সরকারের প্রতি এই চাপের প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুবাইতে আটক হওয়া ৫৭ জনের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করে।

ড. ইউনূসের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা:

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, এই সংকট নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি, হিজ হাইনেস শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং আটক ব্যক্তিদের দণ্ড মওকুফের অনুরোধ জানান। ড. ইউনূসের এই উদ্যোগের ফলস্বরূপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে আটক ৫৭ জনের দণ্ড মওকুফের ঘোষণা দেন। এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত সমস্ত দণ্ড, বিশেষত দেশে নির্বাসনের দণ্ড, বাতিল করা হয়।

দণ্ড মওকুফের ঘোষণা:

এই সিদ্ধান্তের ফলে, দুবাইতে আটক হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা মুক্তির স্বাদ পেতে যাচ্ছেন। এই ঘটনা কেবল কূটনৈতিক সাফল্য নয়, বরং এটি মানবাধিকারের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মর্যাদাও আরও সুদৃঢ় হয়েছে। ড. ইউনূসের এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ নয়, বরং বৈশ্বিক স্তরেও বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *