আতিকুর রহমান চৌধুরী
সমকালীন জীবনযাত্রায় স্টোয়িকবাদের উপস্থিতি ও প্রাসঙ্গিকতার ইতিবৃত্তে এর সূচনা সময়কাল চিন্তা ভাবনারই প্রভাব স্পষ্টত। এ দর্শনের আবির্ভূত গ্রিক দার্শনিকগণ এবং বিকাশীয় রোমান দার্শনিকরা পুরোমাত্রায় প্রবৃত্তি করেছেন স্টোয়িকবাদের প্রসার যেন পঠিত চর্চার বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এটির প্রয়োগের উপস্থিতি জীবন যাপনের আত্মোন্নতির আনুষঙ্গিক হয়ে উঠুক। দার্শনিক “জেনো” “মার্কাস অরেলিয়াস” এবং সেনেকার মতো অনেক প্রসিদ্ধ মনীষী সমস্যার উত্তরণের জন্য এ দর্শন চর্চায় নিমিত্ত হয়েছে। প্রত্যেকের জীবনকালে সব ধরণের সমস্যার সমাধান করতে এ দর্শন চর্চায় শরণাপন্ন হতে হয় । প্রত্যহিক জীবনযাপনে স্টোয়িক দর্শনের প্রয়োগের প্রভাব ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, বিধায় এই দর্শনের চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম জীবনযাত্রার মান বিকশিত করার জন্য।
স্টোয়িক দর্শনের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য যদি আমরা চর্চা করি তাহলেই আমাদের জীবনযাত্রার মনস্তত্ত্বকে সমৃদ্ধ করতে পারবো-
– আকাঙ্ক্ষার সীমাবদ্ধতা থাকা
[চাহিদা এবং আকাঙ্খার ভারসাম্যে প্রতীকী হিসাবে এই ছবি ব্যবহার করা হয়ছে। ( ছবি সংগৃহীত shutterstock.com)]
স্টোয়িক দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে একটি, কোনো জিনিস সংগঠিত করার সম্ভাব্য কিনা অথবা এটি অসম্ভাব্য কিনা এটার পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারা। একজন মানুষ ষাট বছর বয়স অতিবাহিত করার পর সে আর চল্লিশ বছর বয়সী হতে পারবেনা৷ একজন মানুষ কখনো তার দুটি চোখ ব্যাতিত অতিরিক্ত আরো দুটি চোখ আকাঙ্খা করতে পারেনা। আমাদের নিয়ন্ত্রণের সীমারেখার বাইরে কোনো কিছু প্রতশ্যা করা উচিত না স্টোয়িক দর্শন এই শিক্ষা দে।
-কিঞ্চিতে সন্তুষ্টি থাকা
অতিরঞ্জিত চাওয়া-পাওয়া দুরূহ,বরং সামর্থ্য অর্জন দ্বারা যা সম্ভব এটি নিয়ে পরিপূর্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া স্টোয়িক দর্শনের আর একটি বৈশিষ্ট্য। যুগপৎ বিবর্তনে সাথে সাথে যথাযথ জীবনযাত্রা পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য না থাকলেও যা আছে তা দিয়ে ভারসাম্য রেখে জীবন অতিবাহিত করা স্টোয়িক দর্শনের একটি শিক্ষা। এটি দ্বারা লোভ- লালসার তৃপ্তি থেকে বিরত থাকা যাবে এবং অধিক চাওয়া পাওয়ার মনোভাব পোষণ থেকে-ও দূরে থাকবে। অথাৎ অল্পতেই সন্তুষ্টি থাকলে জীবনযাত্রা মনস্তত্ত্বকে নিখুঁতভাবে বর্ধিত করেই স্টোয়িক দর্শন এই বার্তা দে।
-প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে সফলতা অর্জন
প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা দ্বারা সুযোগ-সুবিধা সন্ধান করা স্ট্রোয়িক দর্শনের একটি বিশেষত্ব। পরিশ্রম দ্বারা অর্জিত সফলতা স্থায়ীত্ব এবং সহজলভ্যে অর্জিত সফলতা অস্থায়ীত্ব। বাঁধা বিপত্তি ডিঙিয়ে কোনো কিছু অর্জিত করলে আত্মার দৃঢ়তা অকুতোভয়ে বিকশিত হয়। চ্যালেন্জ মোকেবেলা দ্বারা সফলতা অর্জনের পথ সুগম করে ।
-জীবন ক্ষনস্থায়ী বিধায় দ্বিধাহীনভাবে এগিয়ে যাওয়া
জীবনকাল যে নশ্বর এটির প্রতিচিত্র এমন ভাবে ফুটে তুলেছেন মহান মার্কাস অরেলিয়াস , মহা প্রতাপশালী সম্রাট আলেক্সান্ডারের শেষ পরিণতি যে পরিস্থিতিতে হয়েছিল তদ্রূপ হুবহুই পরিস্থিতিতে শেষ পরিণতি হয়েছিলো তার খচ্চরচালকের; সামাজিক অবস্থানে দুজনে শ্রেণীভেদাভেদে প্রভু-ভৃত্যের, কিন্তু মৃত্যুবরণে তাদের যাত্রা একই শ্রেণীতেই ঘটেছে ! জীবন যে নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী এটি স্টোয়িক দার্শনিকরা লাতিনে একটি রূপক এক্সপ্রেশন দিয়েছেন তা হলো-মেমেন্টো মোরি । মুহুর্তে মৃত্যু হানা দিতে পারে, এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়, এটি হচ্ছে এই বাগধারার সারসংক্ষেপ।
ব্যার্থ হওয়ার জড়ত্বে আমরা অনেক কিছু করা থেকেই বিরত থাকি এবং অপমানিত হওয়ার ভয়ে কোনোকিছু করতে দ্বিধাবোধ করি। কিন্তু জীবন যে ক্ষনস্থায়ী, এতোকিছু চিন্তাভাবনার যে প্রয়োজন নাই এটি শিক্ষা দে স্টোয়িক দর্শন। জীবের মৃত্যু অনিবার্য বিধায় জীবন কে দীর্ঘস্থায়ী না ভেবে জীবন পরিচলনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তঃ নেওয়ার ব্যাপারে অকুতোভয়ে উদ্যামী হওয়া উচিত।
– অর্জিত বিদ্যা কে শ্রেয়তর সম্পদ মনে করা
মানুষ শ্রেষ্ঠ বলে ভূষিত বিদ্যা অর্জনে পারদর্শী বলে। জ্ঞান আহরণ দ্বারা মানুষ বিবেকবুদ্ধি অর্জন করে। সহজাত আচরণে মানুষ বিদ্যা অর্জনে নিমিত্ত হয়। জীবনকাল অতিবাহিত করতে গিয়ে আমাদের দুনিয়াবি যা কিছু করা প্রয়োজন সবকিছু বিদ্যা কে কাজে লাগিয়ে সম্পন্ন করি। আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত একজন মানুষের জীবনে যা ঘটে তা তার অর্জিত বিদ্যার ব্যাবহারের উপর নির্ভরতায় হয়। সুতরাং একজন মানুষের আত্মোন্নতির একমাত্র নিয়ামক তার অর্জিত বিদ্যা কে যথাযথ ভাবে প্রায়োগিক ভাবে কাজে লাগানো। স্ট্রোয়িক দর্শনের মতে আপনার অর্জিত বিদ্যা কে যদি আপনি আপনার জীবন পরিচলনা করার ক্ষেত্রে যথার্থে প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে আপনি জীবনে উন্নতি করতে পারবেন, সফলতা অর্জন করতে পারবেন। স্টোয়িক দর্শন আবার এটাও শিক্ষা দে আপনি সময় উপযোগী আপনার বিদ্যা কে কাজে লাগান, পরিক্ষার পড়াশোনা যদি পরিক্ষার আগে না পড়ে পরিক্ষার পরবর্তীতে পড়েন তা হলে আপনার এই বিদ্যা যথার্থ ব্যবহার হয় নাই এবং আপনার কাজেও আসে নাই।
বিদ্যা একজন ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ সম্পদ কারণ তাঁর জীবনের সমস্ত প্রক্রিয়াটি জ্ঞানের অন্তরায় ।
–লক্ষ্যমাত্রা সুনির্দিষ্ট করা
পরিকল্পনা ভাবমাধুর্য করে কোনো কিছুর লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করলে কাজটি যথাযথ ভাবে হয়। তাই জীবন কাঠামো গঠনের ক্ষেত্রে সুগঠিত একটি পরিকল্পনা থাকা উচিৎ। লক্ষ্যবস্তু সুনির্দিষ্ট থাকলে জীবনযাত্রার পরিচালনা একটি রুটিন মাফিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় যেটি দ্বারা চুড়ান্ত গন্তব্য পর্যন্ত যাওয়া যায়। স্টোয়িক দর্শন এটি শিক্ষা দে একজন ব্যক্তি জীবন পরিচলন প্রক্রিয়া কেমন হবে তাঁর একটি যথার্থ পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং পরিকল্পনা করার সিদ্ধান্তঃ এ তার পার্থক্য বুঝে নিতে হবে তার জীবনে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি গুরুত্বহীন। গুরুত্ব যেটি সেটিকে পরিকল্পনায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে, এবং গুরুত্বহীন যেটি সেটি তাঁর জীবনের পরিকল্পনা থেকে বাদ দিতে হবে।
– প্রসিদ্ধি প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা কে লঘু করুন
কীর্তিময় কর্ম সাধন করে সবাই প্রসিদ্ধি অর্জনে ভূষিত হতে চাই। ভালো কাজ দ্বারা প্রসিদ্ধি অর্জন ইতিবাচক। কিন্তু সবকিছু সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, বিধায় সান্নিধ্যের বাইরে কীর্তি করে প্রসিদ্ধি অর্জন করা উচিত না স্টোয়িক দর্শন এটাই বলে।
একজন মানুষের জনপ্রতিনিধি হয়ে কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা আছে এবং সে এটি নির্বাচিত হয়ে জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন করে প্রসিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু সে যদি আরো বেশি প্রসিদ্ধি পাওয়ার জন্য মেয়র হতে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে সে খ্যাতি অর্জনের যে সুযোগটা পেয়েছিল ওটাও হারাবে। অথাৎ স্টোয়িক দর্শনের মতে একজন ব্যক্তির কার্যাবলীর যোগ্যতা অনুযায়ী প্রসিদ্ধি অর্জনে ছোটা উচিত।
-প্রতিনিয়ত জ্ঞান অর্জনে নিমিত্ত হওয়া
মানুষ শ্রেষ্ঠ পরিচায়কে ভূষিত হয়েছেন জ্ঞান অর্জনের সক্ষমতা থাকায়। আমাদের প্রতিমুহূর্তের কার্যাবলী তে লদ্ধ জ্ঞান কে প্রয়োগ করে ঐ অর্জিত বিদ্যা আরো বিকাশ ঘটিয়ে আমরা আমাদের মস্তিষ্ক কে বিস্তৃত করতে পারি। অথ্যাৎ স্টোয়িক দর্শন এটাই অনুসরণ করতে বলে- আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের প্রতিমুহূর্তে জ্ঞান অর্জনে প্রবৃত্তি করি, কেননা যার জ্ঞানের পরিধি বিশাল তাঁর বুদ্ধির জোর ও মজবুত। আর যে ব্যক্তি জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান সে পরিপূর্ণ চরিত্রের একজন।
স্টোয়িক দর্শনে বিদ্যা অর্জন কে প্রাধান্য দিয়েছে জীবনের পরিকল্পনায় দৃঢ়তার জন্য। স্টোয়িক পন্ডিত সেনেকা বলেন ‘জীবদ্দশায় যে জ্ঞান অর্জন করতে ব্যার্থ্য সে জীবিত হয়েও মৃত ‘ আত্মার উন্নতি করতে হলে বিদ্যা অর্জনের অপরিসীম এটাই বলেছেন স্টোয়িক পন্ডিতবৃন্দ।
এছাড়া ‘মনীষী এপিকটেটিউস জ্ঞান অর্জন যে অপরিহার্যের অনুষঙ্গ এটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন ‘ যে লোক জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে দ্বিধাবোধ অনুভব করেন অথ্যাৎ সে যদি মনে করে এই জ্ঞান আমার আগেই অন্য কেউ অর্জন করে ফেলছে তাই আমি করলে আর কোনো কার্যকরী হবেনা, সে সমস্ত লোক কখনো আত্মার বিকাশ করতে পারবে না। অথাৎ এটি শিক্ষা দে জ্ঞান অর্জন সাচ্ছন্দ্যে করা উচিত।
জ্ঞান অর্জনে গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে মহান রোমান সম্রাট “আরেলিয়াস” বলেছেন ‘কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি যদি আমার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে ভুল ত্রুটি প্রকাশ করে তাহলেই আমি অবশ্যই আমি আমার ভুল স্বীকার করে সংশোধন করবো ‘
জ্ঞান অর্জনে অহংকার কে চূর্ণ করা লাগবে এটি শিক্ষা দে এই প্রতাপশালী রাজার উক্তি তে।
স্টোয়িক দর্শন এটিকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় অর্জিত জ্ঞান কে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানোর, তাই যথার্থ কাজে আপনার লদ্ধ জ্ঞান কে কাজে প্রয়োগ করতে হবে আত্মার বিকাশ করতে গেলে।
[ শারীরিকভাবে অক্ষমতা হওয়ার পরও জ্ঞান অর্জনে নিমিত্ত স্টিফেন হকিং।
Photo: Graham CopeKoga/Cambridge University Library]
– বিপর্যয় পরিস্থিতিতে করণীয়
সুখ উপলব্ধি করা যায় দুঃখ আছে বলে। অনুকূল -প্রতিকূলতা পার্থক্য করা সম্ভব বৈপরীত্যের উপস্থিতির কারণে। অথাৎ জীবনকালে কোনো না কোনো সময়ে বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে কোনো ব্যাক্তির। হঠাৎই দুর্ঘটনা ঘটে যায় অনেকের ক্ষেত্রে এমন আমরা পরিলক্ষিত করি। ঐরকম বিপর্যস্ত সময়ে ধৈর্য ধরে, বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যথার্থ সিদ্ধান্তঃ নেওয়া উচিৎ এটাই শিক্ষা দে স্টোয়িক দর্শন। প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হলেও এটি সঠিকভাবে উত্তরনের বিকল্প পন্থা অবশ্যই আছে, সেটি হচ্ছে
- প্রথমে অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করতে হবে কেনো আজ তাঁর বেহাল দশা
- কার্যকরী এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে সমস্যা সমাধানের জন্য
- ক্লেশ, মনোকষ্ট মোকাবিলা করতে গিয়ে অধৈর্যশীল হওয়া যাবেনা, ধৈর্যশীল হয়ে এ-সব মোকাবেলা করতে হবে
- মানসিকভাবে শক্ত থাকা লাগবে, এবং সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন মনোভাবি হতে হবে
- বিপর্যয় অবস্থায় প্রয়োজন হলে বিজ্ঞ লোকের পরমর্শ নিতে হবে
বিশ্ববিখ্যাত ব্রাজিলীয় লেখক ” পাওলো কোয়েলহো” বিপর্যস্ত সময়ের করণীয় ব্যাপারে লিখতে গিয়ে বলেন :-
“আমার জীবনে আমি অনেক ঝড় দেখেছি। আর আমি শিখেছি ঝড়কে নিয়ন্ত্রণের শক্তি আমার নেই। কিন্তু আমার আছে ধৈর্য, যার মাধ্যমে আমি ঝড়ের সময় পার করে আগামীর দিকে তাকাতে পারি”
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ বলেন “
“সমস্যা থেকে দূরে সরে যাওয়া সমস্যা সমাধানের কোন পথ না। সমস্যাকে মোকাবেলা করতে হয় সমস্যার ভেতরে থেকে। -(বিপদ)
বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনো না কোনো বিকল্প পন্থা আছে। সমধানের বিকল্প পন্থা টি খুঁজে নিতে হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে, এটি স্টোয়িক দর্শন চর্চায় প্রদর্শিত হয় ।
-পরনিন্দা থেকে দূরে থাকা
[পরনিন্দা নেতিবাচক এটি এই ছবিতে সতর্কীকরণঃ ভাবে প্রদর্শিত করেছেন। ছবি সংগৃহীত–wikiHow]
এখন পরচর্চা স্বাভাবিক সংস্কৃতির অংশ বিশেষে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অন্যজনের সমালোচনা করে আমাদের জীবনে কোনো উন্নতি হয়না বরং নেতিবাচক প্রভাব পরে কেননা সমালোচনার দ্বারা সমালোচক ব্যক্তির শত্রুতে পরিণত হয়। পরনিন্দা করার আগে নিজের অবস্থা আগে চিন্তা করা উচিত আমি যে ঐ ব্যক্তির সমালোচনা করছি, আমি নিজেও কতটুকু উত্তম ব্যক্তি। একজন উত্তম ব্যক্তি কখনো অন্যের দূর্বলতা কে পুঁজি করে সমালোচনা করে না, বরং সে তাঁর দূর্বলতা টা উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক পন্থায় সাহায্য করে। স্টোয়িক দর্শনের মতে কোনো ব্যক্তির দূর্বলতা কে ইতিবাচক ভেবে নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করে তাঁর দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা উচিৎ, নেতিবাচক মন্তব্যে সমালোচনা করা উচিৎ না।
পরিপূর্ণ একজন ব্যক্তি কখনো পরনিন্দা তে লিপ্ত হয় না, ইস্ট লাউহন বলেন “নিন্দা সে করে যার কোনো কিছু অর্জন করার যোগ্যতা নাই “
পরকেন্দ্রিক সমালোচনা না করে আত্মকেন্দ্রিক চর্চায় সংশোধিত মনোভাবি হতে হবে জীবন সুখী হতে চাইলে।
সর্বশেষে বলবো স্টোয়িক দর্শনের চর্চা একজন যথার্থ মানুষের জীবন গঠনের ক্ষেত্রে অনিবার্য। এছাড়া আমাদের উচিৎ দৈনন্দিন কাজের গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়া মূহুর্ত গুলো একটি দিনপঞ্জি তে লিখে রাখা উচিত৷ এটা দ্বারা আপনি আপনার জীবনের ভুল ত্রুটিগুলো সহজে পার্থক্য করতে পারবেন। এবং উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট করে এগিয়ে যাবেন। সন্দেহ, অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট এমন লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া যাবেনা। স্টোয়িক দর্শন স্পষ্টত পার্থক্য করে দে কোনটি নেতিবাচক এবং কোনটি ইতিবাচক। বিধায় স্টোয়িক দর্শনের ভিত্তি মতে আমরা জীবন পরিচলনা করতে পারলে ইতিবাচক কে গ্রহণ করে নেতিবাচক কে পরিহার করে জীবনের সমৃদ্ধি করতে পারবেন।