স্বপ্নগুলো আটকে গেছে সেশনজটে

মাজিদুল ইসলাম উজ্জ্বল

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর প্রধান লক্ষ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। এর জন্য একজন শিক্ষার্থীর মুখোমুখী হতে হয় অনেক প্রতিদ্বন্দির । কারণ, ইউজিসির সূত্রে জানা যায়-গত শিক্ষাবর্ষে উচ্চ শিক্ষায় আসে ১৩ লাখ শিক্ষার্থী । আর পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৫০ হাজার ৩৯৬টি। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধকে বলা হয় এক ‘রক্তপাতহীন’ যুদ্ধ। সে যুদ্ধ জয় করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, তারা যেন দীর্ঘ-দিনের আকাঙ্খার অবসান ঘটিয়ে এক সোনার হরিণ লাভ করে। কিন্তু প্রায় সময়ই তাদের এই আনন্দ হতাশায় রূপান্তরিত হয়ে যায় সেশন জট নামক ভয়াল কালসাপের ছোবলে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ার কারণে তৈরী হয় সেশনজট।  বেশ কিছু কারণে সেশন জট তৈরী হয়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে ক্লাস পরীক্ষা না হওয়া, বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা, শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোন অনাকাঙিত – ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়া।

  ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৮০ দিনই ছুটি । এ হিসাবে বছরে প্রায় ৬মাস বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কারণ যা-ই হোকনা কেন সেশনজট যে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে কত বড় দুর্ভোগ বয়ে আনে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ কারী বেশিরভাগ শিক্ষর্থীই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই সময় যত বাড়তে থাকে অর্থনৈতিক চাপও তত বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে পরিবারের হাল ধরার তাগিদ । এ কারণেই উল্লেখ যোগ্য পরিমাণ শিক্ষার্থী নিজ বাড়িতে ফিরতে হীনমন্নতায় ভোগে। এই পারিবারিক আর সামাজিক চাপে কত শিক্ষার্থী যে আত্মহুতি দেয়, সে হিসেব কারও অজানা নয়। জীবনের সবচেয়ে কর্মক্ষম সময়টা পড়ার টেবিলে কাটিয়ে সেশনজটের কবলে পরে খোয়াতে হয় চাকুরির বয়স। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নটা আটকে যায় সেশন জটে।  করোনা মহামারীর জট কাটিয়ে উঠতে দেশের সব বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়ই বেশ কিছু রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে।  প্রয়োজন  মাফিক ক্লাস- শিডিউল পরিবর্ধন করা হয়েছে এবং সেমিস্টারের ব্যাপ্তি কমানো হয়েছে। কিন্তু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে  উল্লেখযোগ্য তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি ডজন খানেক ডিপার্টমেন্টে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজী, গণিত, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, পরিসংখ্যান, আইন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

সেশন জট কাটানোর উপায়টা খুব কঠিন নয়। জটে আক্রান্ত ডিপার্টমেন্ট গুলোর শিক্ষকদের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলেই এ জট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থান  শেষে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তার স্বরুপে ফিরতে শুরু করলেও  পিছিয়ে আছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ভিসি নিয়োগ এবং প্রসাশনিক জটিলতার অজুহাতে এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি অনেক ডিপার্টমেন্ট। তাই সেশন জটের অন্ধকার গহ্বর থেকে বের হওয়ার আশা- দুরাশায় পরিণত হচ্ছে দিনে দিনে।  

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টায় স্মারক লিপি, অবস্থান কর্মসূচি, গণমাধ্যমের উদ্বিগ্নতা কোনো কিছুই কাজে আসে নি। তাই সেশনজটের অনন্ত গহ্বর থেকে মুক্তির আর কোন পথ জানা নেই ইবিয়ানদের। স্বপ্নের ক্যাম্পাস টা যেন এক ধুসর বর্ণহীন জেলখানায়  পরিণত হচ্ছে ধীরে ধীরে।  দেশের সব প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে চালু থাকলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস- পরীক্ষা চলছে না ভিসি নিয়োগ, বন্যা ও নিরাপত্তার অভাব সহ নানান অজুহাতে। কবে সেই মহারথীদের সুনজর পড়বে আর কবে প্রাণ ফিরে পাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেই প্রত্যাশায় চেয়ে আছে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী। 

লেখক পরিচিতিঃ

মাজিদুল ইসলাম উজ্জ্বল

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

ইমেইলঃ majidulislamuzzal@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *