মোহাম্মদ আল আমিন,
বহু বছর থেকে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। প্রতি বছর আমাদের প্রায় ২/৩ টি বড় দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘূর্ণিঝড়, খড়া, শৈতপ্রবাহ, তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও বন্যার মতো অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশের। সময়ের ঘড়ি অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এই সংকট বেড়েই চলছে। সম্প্রতি ২০২২ সালে সিলেটের ভয়াবহ বন্যা এবং ২০২৪ সালে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কবলিত হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য চারটি স্তর রয়েছে। সেগুলো হলো পূর্ব প্রস্তুতি, প্রশমন এবং প্রতিরোধ, প্রতিক্রিয়া ও পুর্নবাসন। ২০০৪ সালের বন্যার পর ২০২২ সালে সিলেটে প্রথম ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ২০০৪ স্যোশাল মিডিয়া ইউজার ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালে স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে বন্যাকালীন উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক সাড়া জুগিয়েছে। স্যোশাল মিডিয়া একটি সংবাদ যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তত দ্রুত টিভি কিংবা পত্রিকা সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে না। তেমনিভাবে ২০২৪ সালে এসে একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে বাংলাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। ফলে দেশ ও প্রবাস থেকে বন্যার্তদের পাশে মানুষ দাড়িয়েছেন।
২০২৪ সালের বন্যায় মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরেছি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেন্ট্রাল কোঅরডিনেশন এবং সঠিক ত্রাণ ব্যবস্থাপনা প্রধান সমস্যা হিসেবে লক্ষণীয়। দুর্যোগকালীন দেশ ও দেশের বাহিরে সকল প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ধর্মীয়, ব্যবসা, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করে থাকেন। কিন্তু সংগঠন গুলোর মধ্যে সমন্বয়নহীনতা ও সঠিক তথ্যের ঘাটতির কারণে ত্রান অপচয়, স্বজনপ্রীতি, কাজের পুনরাবৃত্তি বা একই এলাকায় বারবার বিতরণ এবং দুর্গম এলাকায় ত্রাণ না পৌঁছানোর মতো সমস্যা দৃশ্যমান। তা সত্ত্বেও এ বছর টিএসসিতে ত্রানের হাব সেন্টার করার ফলে গোটা ঢাকাবাসী একজায়গায় সকল উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন প্রতিনিধির মাধ্যমে পৌঁছানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রান হাব করা হলেও সেখানে সঠিক বিতরণ সম্ভব হয় নি।এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি মাধ্যমে ত্রান পাঠানো হলে তা অপচয় ও আত্মসাৎের অভিযোগ রয়েছে।
এই সমস্যা মোকাবিলা এবং ত্রাণ ব্যবস্থাপনা আরো কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হাব সেন্টার নির্মাণ করা। যেটি বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। এই হাব সেন্টারের সঠিক মেকানিজম হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় হাব সেন্টার এবং প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় হাব সেন্টার নির্মাণ করা। জেলা হাব সেন্টার সমন্বয় করবে বিভাগীয় হাব সেন্টারের সাথে এবং বিভাগীয় হাব সেন্টার সমন্বয় করবে কেন্দ্রীয় হাব সেন্টারের সাথে।
এখানে একটি হাব সেন্টার নিয়ন্ত্রণ ও কোলাবোরেশান কমিটি গঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও অধিদপ্তর প্রধানগণ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক থাকবেন। বিভাগীয় কমিটিতে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, বিভাগীয় পর্যায়ে ত্রান কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক এবং স্বেচ্ছাসেবী দলের প্রতিনিধিগণ। তেমনিভাবে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা ত্রান কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিনিধি।
পরিশেষে বলতে চাই, কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হাব নির্মাণ ও দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে প্রস্তাবিত মেকানিজম বাস্তবায়ন করলে দুর্যোগ মোকাবিলা সহজ ও কার্যকরী হবে।
লেখক:
মোহাম্মদ আল আমিন
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়